পরিবার হল মানব জাতির মুল একক (unit), ভিত্তি (base) বা কাঠামো (foundation) যার ধ্বংস মানে মানবজাতির মুল্যবোধ, ভালবাসা এবং অস্তিত্বের ধ্বংস। পরিবার ছাড়া কি একটি শিশুর জন্য এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন প্রতিষ্ঠান বা জায়গা আছে যেখানে নিঃস্বার্থ স্নেহ, ভালবাসা, সম্মান, সততা, সহযোগিতা, দয়া, ত্যাগ, শরীকানা, সমতা, বিশ্বাস, লজ্জা, একতা, আনুগত্য, এবং দায়িত্ববোধ এর মত আবশ্যিক মানবীয়গুণ গুলোর ধারন, শিক্ষা, চাষাবাদ এবং চর্চা হয়? জন্মের পরে কি এগুলো আমরা পরিবার থেকেই শিখি না? পশুদের পরিবার নেই, ফলে তাদের না আছে একে অপরের প্রতি সম্মান, মমতা, আনুগত্য বা দায়িত্ববোধ আর না আছে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, শিষ্টতা, এবং সুখী সমাজ গড়ার ক্ষমতা বা যোগ্যতা। আমাদের জন্মের পর সর্বপ্রথম পরিবারই আমাদেরকে মানুষ নামের একটি শ্রেষ্ঠ প্রাণীর সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দেয় এবং আমাদেরকে সেভাবেই যোগ্য এবং দক্ষ করে গড়ে তুলে। পরিবার নামক পবিত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আমাদের মা বাবা ভালবাসার বীজ আমাদের হৃদয়ের ভিতর এমনভাবে রোপণ করে দেন যে আমরা সারা জীবন এই বীজের রক্ষনাবেক্ষন এবং চাষাবাদ করি এবং তা থেকে সর্বাধিক উপকার নিই এবং এক সময় এই পবিত্র আমানত আবার আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততির হৃদয়ের মধ্যে স্থানান্তর করি।
আমাদের মা বাবা, বড় ভাই-বোন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন হলেন আমাদের শিক্ষক যারা তাঁদের নিজস্ব ধারণকৃত প্রেম, ভালবাসা, ত্যাগ, সততা, নিঃস্বার্থপরতা, সম্মান, শিষ্টতা এবং দায়িত্ববোধের মত গুণগুলো দিয়ে আমাদেরকে গড়ে তুলেন — শিক্ষা দেন এবং চর্চা করান । অন্যকথায়, একটি পরিবারের সদস্যরা শুধু রক্তের বন্ধনেই একে অপরের সাথে বাধা নয়, তাঁরা তো আত্মার বন্ধনেও বাধা। একটি পরিবারের ধ্বংস, সার্বক্ষনিক অন্তর্কলহ, বিচ্ছেদ বা বিলোপ মানেই হল (ঐ পরিবারের) কিছু মানুষের অশান্তি, সময়ক্ষেত্রে মানবিকতার ধবংস, অনেকগুলো জীবন ও আত্মার কান্না এবং পশুদের মত স্বার্থপর হবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। একবার ভাবুন যে আপনার জন্মের পর পরই আপনার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে সংসার ভেংগে গেছে; মা চলে গেছে অন্য একজনের সাথে আর বাবা গেছে আর একজনের সাথে। আর আপনি আছেন পরিবারবিহীন এক লোকালয়ে অথবা সোশ্যাল কেয়ারে কিছু প্রফেশনাল সোশ্যাল ওয়ার্কার বা চাকুরীজীবীর তত্বাবধানে যারা আপনার যত্ন নিবেন টাকার বিনিময়ে। এমন জীবন কি কেউ চায়?
ভাল কথা, বনের পশুদের কি অবস্থা? যদিও বাচ্চাদের লালন পালনের ক্ষেত্রে একটা নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে ভালবাসার মত মানবিক কিছু গুণ পাওয়া যায় তবু ও বন জংগলের এই পশুদের পরিবার নেই এবং এগুলোর কোন প্রশিক্ষণ পায় না বিধায় তারা মানবিক নয় এবং মা-বাবা-ভাই-বোন-চাচা-ফুফু-খালা-মামা-আত্মিয়-স্বজন বলতেও কিছু নেই। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পরিবারগুলো যে ভাবে ভাঙ্গা শুরু করেছে তা না থামালে এদেশের মানুষের বন জংগলের প্রাণীদের মত হওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না। এ কথা কি বলা যায় না যে, পারিবারিক মুল্যবোধ, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ রক্ষার্থে এই সরকার কিছু তো করেইনি, উপরন্ত সরকারী প্রচার মাধ্যম, সিনেমা, নাটক, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন – এসবের মাধ্যমে জ্বলন্ত ঘরে ঘি ঢালার মত এ পবিত্র বন্ধনকে আরও ক্ষণভঙ্গুর করেছে? লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসের পরিবর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের বাধাহীন উর্ধগতি এবং নারী ক্ষমতায়নের বদলে নারী নির্যাতনের রেকর্ড কি তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়? বিবিসি এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (14 July 2022) এর রিপোর্ট অনুযায়ীঃ “ডব্লিউইএফ-এর ২০২২ সালের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ৬ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৭১ নম্বরে নেমে গেছে। গতবছর এই তালিকায় বাংলাদেশ ৬৫ নম্বরে ছিল। তার আগের বছর ছিল ৫০ তম অবস্থানে“। ২০২৩ সালে এই নাম্বার ৭২।
এ অভিযোগ কী আনা যায় না যে, জনগণের দ্বারা অর্পিত ক্ষমতা এবং সম্পদের চরম অপব্যবহার করে এ সরকার মসনদে থাকার জন্য রাজধানী ঢাকাকে পুলিশি ক্যাম্প বানিয়ে এবং ভেংগে দুই ভাগ করে তাদের ক্ষমতার জন্য অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে অথচ এই ঐতিহাসিক ঘনবসতি শহরের বাসিন্দাদের পারিবারিক ভাঙ্গনকে রোধ করতে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছে? এবং কারো কারো মতে সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে ইচ্ছে করেই এই ভাঙ্গনে সহযোগিতা করেছে ? প্রমান? হায়! এই “ঢাকায় ৪০ মিনিটে ১টি তালাক (১৩ জুন ২০২৩, প্রথম আলো) হয়”। আরও কনফার্ম হতে চান? “ঢাকায় দিনে ৩৭টি সংসার ভাঙছে (১৪ জুন ২০২৩, মানবজমিন)“। দেশে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনের মহামারি নাকি তালাকের উৎসব চলছে – তা আপনারাই বলুন। সারা দেশেই পরকীয়া, পারিবারিক সহিংসতা এবং ভন্ড প্রেমিকের বাসায় টিনেজ প্রেমিকার আমরণ অনশন যেন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই কি একটা সরকারের পারিবারিক এবং সামাজিক উন্নয়ন?
এ সরকারের আমলে জনগণের টাকায় রাজশাহীকে সবচেয়ে সুদর্শন নগরী করা হয়েছে অথচ “বিবাহ বিচ্ছেদে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এই রাজশাহী বিভাগ। সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদের হার দশমিক ৬১ শতাংশ” (২৪, রোববার, সেপ্টেম্বর, ২০২৩, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা)। উপরে ফিটফাট ভীতরে সদরঘাট! অভুতপুর্ব উন্নয়নঃ এ যেন আধুনিক ইংরেজি কবি ক্যারল অ্যান ডাফির মিস হ্যাভিশাম কবিতার সেই বিখ্যাত অক্সিমরন (oxymoron) এর মত যা তিনি তাঁর প্রেয়সীকে সম্বোধন করেছেন এই বলে “ বিলাভেড সুইটহার্ট বাস্টার্ড” (Beloved sweetheart bastard) বাংলায় যার অর্থ হতে পারে ‘ আমার ভালবাসার সুহৃদ জারজটা বা হে আমার জারজ প্রেমিক’। আকাশে বাতাসে উন্নয়ন কিন্তু বাসায় বউ আছে তো স্বামী নাই; স্বামী আছে তো বউ নাই!
পরিবারকে রক্ষা করতে হলে পারবিবারিক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখতে হয়; পারিবারিক সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হয়; শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে প্রজন্মের মোরাল কম্পাস বা নৈতিক বৃত্ত/পরিধি তৈরি করতে হয়। সংস্কৃতি, সাহিত্য, মিডিয়া এবং অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পারিবারিক ভিত্তিকে শক্ত করার নীতিমালা এবং পদক্ষেপ নিতে হয়। কিন্ত আফসোস! স্বাধীনতার পর কোন সরকারই উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন জাতি গঠনের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে সেভাবে প্রস্তুত করেনি; আর বর্তমান সরকার তো তাদের দলীয় সেকুল্যার রাষ্ট্রনীতি এবং (মূল লক্ষ্য ও বোধকে পাশ কাটিয়ে) মুক্তিযুদ্ধের মনগড়া চেতনাকে একাকার করার ফলে আমাদের পরিবার এবং নৈতিকতার সকল উপাদানগুলো একে একে এমনভাবে ধ্বংস হচ্ছে যে সেতুভাংগা প্রলয়ঙ্করী বন্যার ধ্বংসযজ্ঞের মত হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলোর ধংসের আলামত ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে ধর্ম-বর্ন-নির্বিশেষে আমাদের এই দেশে অচিরেই পারিবারিক ভালবাসা এবং মূল্যবোধহীন এক জাতি-রাষ্ট্রের উদ্ভব হবে যা মানব সভ্যতার শত্রুরা সব সময়ই চেয়ে এসেছে।
ধর্ষণের রাজনীতিকরণঃ লিবার্টি না লাইসেন্স ?
ধর্ষণ, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের রাজনীতিকরণ সব সরকারই কমবেশি করেছে কিন্তু বর্তমানে তা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধর্ষণের রাজনীতি কীভাবে হয়? একটি দেশের সব নাগরিকদের জন্য একটি আইন থাকবে যা সবার জন্য অবশ্য পালনীয় কিন্তু আপনার রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং নেতাদের জন্য থাকবে আলাদা আইন। যেমন ধরেন সাধারন মানুষ জানে যে ধর্ষণ করলে তাঁর জেল হবে, জরিমানা হবে এবং প্রয়োজনে ফাঁসিতেও ঝুলতে হতে পারে, ফলে তাঁদের ভিতর ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের প্রতি একটি সাধারন ভীতি এবং সম্মান আছে। কিন্তু আপনার রাজনৈতিক দলের ছেলেদের জন্য ধর্ষণের দায়ে আপনিও কোন আইন করেননি আর দেশের প্রচলিত আইনেও আপনি বিচার হতে দেননা। বরং একের পর এক ধর্ষণ করে তা কোন প্রকারে প্রকাশ হয়ে গেলে বড় জোর দল থেকে বহিষ্কার করেন কিন্তু ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ধর্ষণের সেঞ্চুরি হয়, পার্টি হয়, এবং এগুলো দলের নেতা ও কর্মীদের জন্য একটা সাধারণ নর্ম হয়ে গেছে।
যেনা এবং ব্যাবিচারের রাজনিতিকরনের কথা বলছি না; এগুলো তো সাধারন ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হলে মেয়েরা এসে নেতাদের রুমে সময় কাটায়; এগুলো এতটাই সাধারন যে আপনার কাছে তা আইনগতভাবে বৈধ মনে হবে; আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি তাঁরা আরও জানি যে যেনা ব্যাভিচারের জন্য নেতাদের এবং বন্ধুদের রুম ছেড়ে দিতে হয়। হলে ক্ষমতাসীন এবং বড় রাজনৈতিক দল এবং বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতারা এটাকে প্রগতিশীলতা মনে করে। আমি ধর্ষণের কথা বলছিঃ যখন একটা মেয়ে ধর্ষিত হয় তখন আশে পাশের সবাই তো জানে। কিন্তু ছাত্ররা হলো দেশের সবচেয়ে সচেতন, শক্তিশালী এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক এবং বাংলাদেশে ছাত্ররা এ জন্য বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বৈরাচার খেদিয়ে সচেতনতার ইতিহাস তৈরি করেছে ! হাজার হাজার ছেলেদের মধ্যে দিনের বেলায়, রাতের আলোতে রাস্তার পাশে একটা মেয়েকে ধর্ষণের সময় তাদের সচেতনতা, দেশপ্রেম, শক্তিমত্তা, পৌরুষত্ব এবং বীরত্ব কোথায় যায়? একটি অসহায় মেয়েকে তাঁর সম্ভ্রম লুণ্ঠন থেকে রক্ষা করতে পারে না – এদেরকে স্পিরিচুয়ালি মৃত, কাপুরুষ এবং ভন্ড দেশপ্রেমিক বলা ছাড়া আর কিইবা বলা যায়? মূলতঃ তরুন ছাত্রদের চরিত্র, মানবিক বল, এবং নৈতিকতা ধংসের মধ্য দিয়েই এই জাতির মৃত্যু ডঙ্কা বেজে উঠেছে। আর এই জাতির তরুন প্রজন্মকে ধ্বংস করা হয়েছে ধর্ষণ এবং সন্ত্রাসকে রাজনিতীকরনের মাধ্যমে।
ব্যাভিচার, ধর্ষণ, রাজনীতি, ইয়াবা, ক্ষমতা এবং অর্থ দিয়ে এই মেধাবী তরুণ অংশটাকে একেবারে ব্যস্ত এবং বুদ করে নেশার মধ্যে রেখে তাদেরকে পুরোটাই প্যারালাইজড বা বিকলাঙ্গ করে ফেলা হয়েছে; এরাই আবার একসময় ক্ষমতায় যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে, বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে। এরাও তাদের ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তির জন্য পরের জেনারেশনকে একইভাবে ব্যাবহার করবে। ধর্ষণের রাজনীতির গুরুত্ব এবং ধারাবাহিকতা এভাবেই রক্ষা হবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে একপক্ষের সৈন্যরা ধর্ষণকে অপরপক্ষের সৈন্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করে করে। আপনি যখন এই সংবাদটা পড়েন : “ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’ (১ জানুয়ারি, ২০১৯, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা) ।“ তখন কি আপনার মনে হয় না যে বাংলাদেশে এক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে? আপনি কি একটা সুস্থ সমাজে সুস্থ লোকদের দ্বারা এই রকম একটা ঘটনা কল্পনা করতে পারেন?: “তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার, গোপালগঞ্জ (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, , যুগান্তর); এমসি কলেজে গণধর্ষণ, ৮ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ (১২ জানুয়ারি ২০২১, যুগান্তর)” । একটা তরুণ কতটা মানসিক বিকলাঙ্গ এবং সেই সাথে কতটা ক্ষমতাশীল হলে এটা হতে পারে? “উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ তার (ছাত্রলীগ কর্মী) নেশা : অর্ধশত নারী ধর্ষণের অভিযোগ। আশিকুল ইসলাম আশিক (25 December, 2021, দৈনিক মাথাভাঙ্গা)” । এ প্যারা শেষ করি দুটি সংবাদ দিয়েঃ “ভিডিও ধারণ করে ধর্ষণ, সাভারে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা, ঢাকার সাভার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, যুগান্তর)” এবং “ফাঁদে ফেলে ৬ নারী ধর্ষণ ছাত্রলীগ নেতার, ভিডিও ইন্টারনেটে (১১ নভেম্বর, ২০১৭, বার্তা ২৪)” । ছাত্রলীগের এই ছেলেরা যে এই কাজগুলো করছে; এটা কি তাদের লিবার্টি না লাইসেন্স (liberty or licence)? এদের কাজ দেখে কি মনে হয় না যে ধর্ষণ করাটাকে তারা তাদের লিবার্টি বা স্বাধীনতা মনে করে ? যদি লিবার্টি না হয় তাহলে কি তারা ধর্ষণের লাইসেন্স বা অনুমতি পত্র পেয়েছে? এই লিবার্টি বা লাইসেন্স তাদেরকে কে দিয়েছে? তাদের রাজনীতি; ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এটাই হল ধর্ষণের রাজনীতিকরণ।
নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে
কে্ন এ কথা বলছি ? দেখুন, গত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং ৮১৫টি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি। (রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো)। ২০২২ সালে দেশে ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ জন। ধর্ষণের পর হত্যার করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ২৭টি। আর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪০ জন (৬ মার্চ,২০২৩, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)।
যদিও ক্ষমতাসীণ দলের লোকজনই ধর্ষণে অগ্রণী ভুমিকা নেয় তবু তাদের সব সদস্য তো আর ধর্ষণ করছে না কিন্তু এগুলো দেখতে দেখতে আমাদের সবারই সাধারন বিশ্বাস এবং মেনে নেওয়ার রীতি এমন হয়ে গেছে যে এ আর এমন কি? সব দেশেই তো এটা হয়, উন্নত দেশেও হয়; আর উন্নয়নের সাথে কিছু সমস্যা হবেই (এই মানসিকতাই তো সংস্কৃতি, তাই না?)। কি অদ্ভুত যুক্তি এবং মানসিকতা! এই লোকগুলো বলতে চায় যে উন্নয়ন এবং ধর্ষণ হাত ধরে চলে; একটি থেকে আরেকটিকে আলাদা করা যাবে না। ইউরোপের এমন কোন উন্নত দেশ পাবেন যেখানে মেয়েরা রাতে চাকুরী করে, একা একা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট তথা ট্রেনে এবং বাসে যাতায়াত করে কিন্তু ধর্ষিত হয়? আর ধর্ষিত হলে তার বিচার হয় না? প্রশ্ন করতে পারেন, বাংলাদেশে কি বিচার হয় না? জ্বি হয়। তবে এইসব বিচার ধর্ষণকে থামাতে পারছে না। তার অন্যতম কারণ হল, অনেকের মতে, আমাদের ক্ষমতাসীন দল এবং রাষ্ট্র ধর্ষণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহয়তা করে যা উন্নত দেশগুলোতে কখনই হয় না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন ধরেনঃ একজন ছাত্র ধর্ষক যদি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসে থাকে অথবা একজন যৌন নির্যাতনকারি শিক্ষক ক্যাম্পাসে অবস্থান করে, এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বা যৌন নির্যাতনের সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে তবুও তাদেরকে ধরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে যদিও বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধ দমনের কোন প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি নয় এবং এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজও নয়। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীন আইন এবং পুলিশ বিভাগ আছে কিন্তু তাঁরা একজন ধর্ষক, খুনি এবং দাগী অপরাধিকে (সে যদি ছাত্র না হয়েও ক্যাম্পাসে অবস্থান করে) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি এবং বেশ কিছু নিয়ম কানুন ছাড়া ধরতে পারবে না। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে একজন সাধারণ মানুষ ধর্ষণ করলে সে অপরাধী কিন্তু ক্ষমতসীন দলের কোন ছাত্র অথবা ছাত্রনেতা তা করলে সে প্রগতিবাদি এবং আধুনিক আর তার জন্য এসবই জায়েয আছে কারণ সে নাকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি!
শুধু কি তাই? ধানের শীষের ভোট দেওয়াই যে ভদ্রমহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং এর অভিযোগে যে কয়জনের ফাঁসির রায় হয়েছে তারা হয়ত বিশ্বজিতের ফাঁসীর আসামীর মত অনেকেই হাওয়া হয়ে যাবে কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল রাষ্ট্র ভিক্টিমের জন্য কি করেছে, কি ক্ষতিপুরন দিয়েছে তাকে? কিংবা কি ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল যাতে করে তার দলের কোন কর্মীর দ্বারা এই ঘটনা আর না ঘটে?
আমরা জানি পৃথিবীর বিভিন্ন সংগঠনকে তাঁদের কৃতকর্মের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় কারণ একটি দল বা সংগঠনের মধ্যে থেকে কাজ করা একজন সন্ত্রাসী, ধর্ষক বা অপরাধীর অপরাধ থেকে কখনই সেই সংগঠন দায় মুক্ত হতে পারে না। তাহলে এই যে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ বা আওয়ামীলীগের লোকজন দ্বারা এত মারাত্মক অপরাধগুলো হল, অথচ সংগঠনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোন পদক্ষেপ নিল না। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এবং তাদের আশ্রিত ছাত্র সংগঠনের দ্বারা সন্ত্রাস, ধর্ষণ, খুন এবং চাঁদা বাজী নতুন কিছু নয়। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় রাষ্ট্রের থেকে ক্ষমতাসীন দলই হয়ে উঠবে বেশি গুরুত্বপুর্ন এবং একক সার্বভৌম ক্ষমতা। এটা যে কোন দলের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা কি সে অবস্থায় পৌঁছে গেছি?
সংস্কৃতিকে আইন দিয়ে সব সময় নিয়ন্ত্রন করা যায় না । বাংলাদেশে ধর্ষণের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে ধর্ষণকে রাজনীতিকরনের মাধ্যমে। এখানে ধর্ষকরা এতই শক্তিশালী যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সাধারন আম জনতা এদেরকে কাছে একবারে অসহায়। ক্ষমতাসীনদের কাছে রাষ্ট্র এবং এর বিভিন্ন অংগ যখন জিম্মি হয়, তখন আইন দিয়ে এই সংস্কৃতিকে রোধ করা কঠিন। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে দেখি নাই যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙেনি এবং জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করেনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সহ বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের উচিৎ তাঁদের সংগঠনের মধ্যে এমন কিছু স্পষ্ট এবং দুরদর্শিতামুলক নীতি প্রণয়ন করা যাতে তাঁদের মধ্যে থেকে আর দাগী ধর্ষক এবং অপরাধী তৈরি না হয় অন্যথায় রাষ্ট্রের উচিৎ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিয়ে এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিকরণ করেছে
এখানে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিকরণ বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা হল ক্ষমতাসীনরা যখন কোন একটি সম্প্রদায়কে আরেকটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার এবং উত্তেজিত করে । এটি গত ১৫ বছর ধরে হয়ে আসছে এবং পত্রিকার রিপোর্ট পড়লে বুঝা যায় তা কত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমন এমন ঘটনা ঘটেছে যা খুবই অস্বাভাবিক, অভূতপূর্ব এবং এসব ঘটনার পরে রাষ্ট্র এবং ক্ষমতাসীনরা আবার ভিক্টিমকেই দোষারোপ করছে। একটি স্কুলে “হিজাব পরায় ১৮ ছাত্রীকে পেটালেন হিন্দু শিক্ষিকা, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় (৯ এপ্রিল, ২০২২, দৈনিক ইনকিলাব )“। “সিলেটে হিজাব পরায় ছাত্রীকে (হিন্দু শিক্ষক কর্তৃক) অপমান, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ হিজাব পরিধান করায় এক ছাত্রীকে ক্লাসরুমে লাঞ্চিত করার পাশাপাশি প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করার অভিযোগ উঠেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পাঠদানে সময় এসএসসি পরিক্ষার্থী ওই ছাত্রীর সাথে এ আচরণ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক সুনীল চন্দ্র দাস (২০ মার্চ ২০২২, নয়া দিগন্ত)“। ক্ষমতাসীনরা শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ইতিহাস এবং বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেই ক্ষান্ত হয় নাই তারা এখন আবার মুসলিমদের পোষাক, মূল্যবোধ এবং অধিকারের উপর সংখ্যালঘুদের লেলিয়ে দিয়েছে – ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কি এই অভিযোগ আনা যায় না? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০২২ সালের এইচ এস সি বাংলা পরীক্ষায় “নেপাল ও গোপালের“ গল্পের কথা। এই গল্পে দেখানো হয়েছিল কিভাবে মুসলমানদের অত্যাচারে হিন্দুরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। গোটা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সাথে এই গল্পটা লিখেছেন এক হিন্দু প্রফেসর অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল যিনি ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক । (৮ নভেম্বর, ২০২২, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম)“। এগুলো অনেক ঘটনার সিন্ধুর বিন্দুমাত্র। এভাবেই একটি সম্প্রদায়ের নোংরা রাজনীতিকরণ করা হয়েছে । প্রশ্ন হল এই ঘৃণা ছড়ানো এবং রাজনীতিকরনের ফলে আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্র কি উপকৃত হয়েছে? এটা কি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের ধর্ম, বিশ্বাস এবং অধিকারের প্রতি সরাসরি আক্রমন নয়? এবং এতে কি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অরক্ষিত, অবিশ্বাসযোগ্য বিচ্ছিন্ন এবং মারজিনালাইজড বা প্রান্তিক করে ফেলা হচ্ছে না? কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক, অদক্ষ এবং অপরিনামদর্শী স্টেটসম্যানরাই এই ধরণের কাজ করতে পারে।
ডিহিউম্যানাইজেশন বা অমানবীকরণ (Dehumanization)
এখন, এই অভিযোগ করা কি বাড়াবাড়ি হবে যে সামগ্রিকভাবে এই সরকার মানবতার অমানবীকরণ বা ডিহিউম্যানাইজেশন করেছে? ডিহিউম্যানাইজশন কি? এটার মানে হল মানুষকে মনুষ্যত্বহীন বা অমানবীকরন করা। একজন মানুষের মধ্যে যে দয়া, মায়া, সত্যবাদিতা, ভালবাসা, ন্যায়-অন্যায়, হারাম-হালালের বোধ তা ধবংস বা নষ্ট করে তাকে এমনভাবে তৈরি করা যাতে সে নিষ্ঠুর, মিথ্যাবাদী, জালিম, ঠকবাজ, ক্ষমতালোভী, অত্যাচারী এবং নীতিহীন এক মানুষে রূপান্তরিত হয় — যে চেহারাতেই মানুষ কিন্তু আচার আচরনে এবং প্রকৃতিগতভাবে পশুর চেয়েও অধম। এই ফ্যাসিস্ট এস্টাবলিশমেন্ট অপবিচার, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি এবং কুরাজনীতির মাধ্যমে এসব ভাল গুনগুলোর প্রতি মানুষের মনে এক প্রকার অরুচি তৈরি করেছে। যেমন ধরেন আপনার বাসায় সুন্দরী বউ আছে কিন্তু পৌরষত্ব হারানোর কারনে আপনি তার প্রতি কোন আকর্ষনই অনুভব করেন না অথবা আপনার খুব সুদর্শন সামর্থ্যবান স্বামী আছে কিন্তু স্যাডিস্ট আচরনের কারনে তার প্রতি আপনার কোন ফিজিক্যাল এট্রাকশন বা অনুভুতি নেই। আবার আপনার পেটে খুবই ক্ষুধা ছিল কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত পোলাও কোর্মা খেয়ে পেটের অসুখে থাকায় অনেক ভাল খাবার সামনে থাকার পরেও আপনি খেতে পারছেন না। কারণ আপনার রুচি নেই । গত ১৫/২০ বছরের শাসন, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারী নীতি মালা এতটাই নীচুমানের যে দেশের মানুষের মানবিকগুণগুলোর প্রতি তা গত ১৫ বছরের প্রজন্মকে প্রায় সমূলেই ডি-হিউম্যানাজাইড করে ফেলেছে।
মানুষ হারামকে আর হারাম মনে করে না; যেনা-ব্যাভিচারকে অপরাধ দূরের কথা, এই জেনারেশন পাপই মনে করে না। যেমন ধরেনঃ আপনি প্রায়ই দেখবেন যে অনেক উপজেলার ইউ এন ও এবং ম্যাজিস্ট্রটরা তাদের উপজেলার স্কুলগুলোতে গিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কথা বলে, আইন দেখায় এবং কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারন করে; আবার এদের অনেকেই ১৪-১৭ বছরের মেয়েদের বিয়ে হলে তা আইনবলে ভেঙ্গে দেয় যা তারা আবার তাদের ফেসবুকে বড় করে প্রচার করে। কিন্তু এই ছেলেমেয়েরাই এই বয়সে যেনা-ব্যাবিচার করলে তার বিরুদ্ধে কথা বলার মত শক্তি এবং সাহস এই মেরুদণ্ডহীন সিভিল সার্ভেন্টদের নেই (খুব অল্প ব্যাতিক্রম ছাড়া)। এদের বিবেক বলতে কি কিছু আছে? দেশের সাধারন মানুষের টাকায় এদের লেখাপড়া হয়, চাকুরী হয়, বেতন হয় এবং এই মানুষদের সেবা করার শপথ নিয়েই এরা চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় কিন্তু চেয়ারে বসলেই এরা খোদা বনে যায়। কি এক আত্মপ্রবঞ্চিত জাতি আমরা? যে জাতির শিক্ষিত সম্প্রদায় এবং দায়িত্বশীলরা ক্ষমতা, পদ এবং অর্থের কাছে এত সহজে এবং সস্তায় বিক্রি হয়, মাথা নত করে, সে জাতির কপালে গোলামী ছাড়া আর কি লিখা হবে? দেখুন, এই সরকার ১৮ বছরের নীচের মেয়েদের বিবাহকে আইন বহির্ভুত করেছে কিন্তু ১২ বছর থেকে ছেলে মেয়েদের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ককে শিক্ষা কারিকুলাম, এন জি ও এবং সমাজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উতসাহিত করেছে। ফলে বিয়ের প্রতি প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে । অপ্রাপ্ত, অবাধ, অবৈধ এবং শিক্ষাহীণ যৌনাচারের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এক প্রজন্ম যারা বিয়ে করলেও অন্যদের প্রতি আসক্ত হয়, জড়িয়ে পড়ে পরকীয়াই আর ভেংগে যায় সংসার। সবকিছু বিচার করে এ কথা বলা কি অন্যায় হবে যে, পরিবার, ভালবাসা, দায়িত্ববোধ এবং একে অপরের প্রতি সম্মান – এসব মানবীয়গুণ গুলোকে পরিকল্পিতভাবে এই সেক্যুলার এস্টাবলিশমেন্ট এবং তার পান্ডারা প্রায় পুরোটাই ডিহিউম্যনাজাইড করেছে? এ বিষয় নিয়ে আরও ব্যাপকভাবে গবেষণা এবং আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
সমগ্র দেশের এবং ক্ষমতাসীনদের নিজেদের স্বার্থেই ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতিকরণ বন্ধ করা উচিৎ। এসব বিষয় আমাদের, পরিবার, বিশ্বাস, জাতিসত্তা এবং সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত। এগুলো এখনই না থামালে তা একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে যা আমাদের পরিচয় বা আইডেন্টিটিকে একসময় একেবারেই ধবংস করে ফেলবে।
(লেখাটি আমার দেশ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)