পরিবার হল মানব জাতির মুল একক (unit), ভিত্তি (base) বা কাঠামো (foundation) যার ধ্বংস মানে মানবজাতির মুল্যবোধ, ভালবাসা এবং অস্তিত্বের ধ্বংস। পরিবার ছাড়া কি একটি শিশুর জন্য এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন প্রতিষ্ঠান বা জায়গা আছে যেখানে নিঃস্বার্থ স্নেহ, ভালবাসা, সম্মান, সততা, সহযোগিতা, দয়া, ত্যাগ, শরীকানা, সমতা, বিশ্বাস, লজ্জা, একতা, আনুগত্য, এবং দায়িত্ববোধ এর মত আবশ্যিক মানবীয়গুণ গুলোর ধারন, শিক্ষা, চাষাবাদ এবং চর্চা হয়? জন্মের পরে কি এগুলো আমরা পরিবার থেকেই শিখি না? পশুদের পরিবার নেই, ফলে তাদের না আছে একে অপরের প্রতি সম্মান, মমতা, আনুগত্য বা দায়িত্ববোধ আর না আছে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, শিষ্টতা, এবং সুখী সমাজ গড়ার ক্ষমতা বা যোগ্যতা। আমাদের জন্মের পর সর্বপ্রথম পরিবারই আমাদেরকে মানুষ নামের একটি শ্রেষ্ঠ প্রাণীর সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দেয় এবং আমাদেরকে সেভাবেই যোগ্য এবং দক্ষ করে গড়ে তুলে। পরিবার নামক পবিত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আমাদের মা বাবা ভালবাসার বীজ আমাদের হৃদয়ের ভিতর এমনভাবে রোপণ করে দেন যে আমরা সারা জীবন এই বীজের রক্ষনাবেক্ষন এবং চাষাবাদ করি এবং তা থেকে সর্বাধিক উপকার নিই এবং এক সময় এই পবিত্র আমানত আবার আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততির হৃদয়ের মধ্যে স্থানান্তর করি। আমাদের মা বাবা, বড় ভাই-বোন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন হলেন আমাদের শিক্ষক যারা তাঁদের নিজস্ব ধারণকৃত প্রেম, ভালবাসা, ত্যাগ, সততা, নিঃস্বার্থপরতা, সম্মান, শিষ্টতা এবং দায়িত্ববোধের মত গুণগুলো দিয়ে আমাদেরকে গড়ে তুলেন — শিক্ষা দেন এবং চর্চা করান । অন্যকথায়, একটি পরিবারের সদস্যরা শুধু রক্তের বন্ধনেই একে অপরের সাথে বাধা নয়, তাঁরা তো আত্মার বন্ধনেও বাধা। একটি পরিবারের ধ্বংস, সার্বক্ষনিক অন্তর্কলহ, বিচ্ছেদ বা বিলোপ মানেই হল (ঐ পরিবারের) কিছু মানুষের অশান্তি, সময়ক্ষেত্রে মানবিকতার ধবংস, অনেকগুলো জীবন ও আত্মার কান্না এবং পশুদের মত স্বার্থপর হবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। একবার ভাবুন যে আপনার জন্মের পর পরই আপনার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে সংসার ভেংগে গেছে; মা চলে গেছে অন্য একজনের সাথে আর বাবা গেছে আর একজনের সাথে। আর আপনি আছেন পরিবারবিহীন এক লোকালয়ে অথবা সোশ্যাল কেয়ারে কিছু প্রফেশনাল সোশ্যাল ওয়ার্কার বা চাকুরীজীবীর তত্বাবধানে যারা আপনার যত্ন নিবেন টাকার বিনিময়ে। এমন জীবন কি কেউ চায়? ভাল কথা, বনের পশুদের কি অবস্থা? যদিও বাচ্চাদের লালন পালনের ক্ষেত্রে একটা নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে ভালবাসার মত মানবিক কিছু গুণ পাওয়া যায় তবু ও বন জংগলের এই পশুদের পরিবার নেই এবং এগুলোর কোন প্রশিক্ষণ পায় না বিধায় তারা মানবিক নয় এবং মা-বাবা-ভাই-বোন-চাচা-ফুফু-খালা-মামা-আত্মিয়-স্বজন বলতেও কিছু নেই। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পরিবারগুলো যে ভাবে ভাঙ্গা শুরু করেছে তা না থামালে এদেশের মানুষের বন জংগলের প্রাণীদের মত হওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না। এ কথা কি বলা যায় না যে, পারিবারিক মুল্যবোধ, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ রক্ষার্থে এই সরকার কিছু তো করেইনি, উপরন্ত সরকারী প্রচার মাধ্যম, সিনেমা, নাটক, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন – এসবের মাধ্যমে জ্বলন্ত ঘরে ঘি ঢালার মত এ পবিত্র বন্ধনকে আরও ক্ষণভঙ্গুর করেছে? লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসের পরিবর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের বাধাহীন উর্ধগতি এবং নারী ক্ষমতায়নের বদলে নারী নির্যাতনের রেকর্ড কি তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়? বিবিসি এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (14 July 2022) এর রিপোর্ট অনুযায়ীঃ “ডব্লিউইএফ-এর ২০২২ সালের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ৬ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৭১ নম্বরে নেমে গেছে। গতবছর এই তালিকায় বাংলাদেশ ৬৫ নম্বরে ছিল। তার আগের বছর ছিল ৫০ তম অবস্থানে“। ২০২৩ সালে এই নাম্বার ৭২। এ অভিযোগ কী আনা যায় না যে, জনগণের দ্বারা অর্পিত ক্ষমতা এবং সম্পদের চরম অপব্যবহার করে এ সরকার মসনদে থাকার জন্য রাজধানী ঢাকাকে পুলিশি ক্যাম্প বানিয়ে এবং ভেংগে দুই ভাগ করে তাদের ক্ষমতার জন্য অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে অথচ এই ঐতিহাসিক ঘনবসতি শহরের বাসিন্দাদের পারিবারিক ভাঙ্গনকে রোধ করতে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছে? এবং কারো কারো মতে সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে ইচ্ছে করেই এই ভাঙ্গনে সহযোগিতা করেছে ? প্রমান? হায়! এই “ঢাকায় ৪০ মিনিটে ১টি তালাক (১৩ জুন ২০২৩, প্রথম আলো) হয়”। আরও কনফার্ম হতে চান? “ঢাকায় দিনে ৩৭টি সংসার ভাঙছে (১৪ জুন ২০২৩, মানবজমিন)“। দেশে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনের মহামারি নাকি তালাকের উৎসব চলছে – তা আপনারাই বলুন। সারা দেশেই পরকীয়া, পারিবারিক সহিংসতা এবং ভন্ড প্রেমিকের বাসায় টিনেজ প্রেমিকার আমরণ অনশন যেন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই কি একটা সরকারের পারিবারিক এবং সামাজিক উন্নয়ন? এ সরকারের আমলে জনগণের টাকায় রাজশাহীকে সবচেয়ে সুদর্শন নগরী করা হয়েছে অথচ “বিবাহ বিচ্ছেদে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এই রাজশাহী বিভাগ। সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদের হার দশমিক ৬১ শতাংশ” (২৪, রোববার, সেপ্টেম্বর, ২০২৩, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা)। উপরে ফিটফাট ভীতরে সদরঘাট! অভুতপুর্ব উন্নয়নঃ এ যেন আধুনিক ইংরেজি কবি ক্যারল অ্যান ডাফির মিস হ্যাভিশাম কবিতার সেই বিখ্যাত অক্সিমরন (oxymoron) এর মত যা তিনি তাঁর প্রেয়সীকে সম্বোধন করেছেন এই বলে “ বিলাভেড সুইটহার্ট বাস্টার্ড” (Beloved sweetheart bastard) বাংলায় যার অর্থ হতে পারে ‘…